করোনা মহামারীঃ সময় দ্রুত হারিয়ে ফেলছি
03 Apr, 2020  

মুহাম্মদ ইউনূস

আমি শুধু সময়ের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। প্রতি মহুর্তে যেন আমরা সুযোগ হারিয়ে ফেলছি। এখনো বিষয়টা বুঝে উঠতে পারলে আমাদের সামনে  যেরকমের যুদ্ধ আমরা সেরকমের প্রস্তুতি নিতে পারতাম। যুদ্ধটার চেহারাটা যেন আমরা কেউ দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছি না। চেহারাটা পরিষ্কার বুঝতে পারলে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম যে— জীবনের উপরেই যখন হামলা, জীবন বাজী রেখেই এখন লড়াইতে নামবো। আত্মসমর্পনের কোনো সুযোগ এখানে নেই।

করোনা রোগের বিস্তারের গতি দেখলে যে কোনো মানুষ থ হয়ে যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেজিং অফিসকে চীন একটা  অজানা রোগের কথা জানিয়েছিল ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। আজ মার্চের ২২ তারিখ। অর্থাৎ ৮২ দিন আগে। এই ৮২ দিনে কিন্তু এই রোগ সারা দুনিয়া তছনছ করে ফেললো। তার মোকাবেলার জন্য এখন সেনাবাহিনী তলব করতে হচ্ছে। দেশকে দেশে সে সমস্ত কিছু অচল করে মানুষকে ঘরের ভেতর দিনরাত কাটাতে বাধ্য করছে। সরকার তার মোকাবেলার জন্য ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিচ্ছে। সরকার প্রধানরা সারাক্ষণ টেলিভিশনের সামনে এসে মানুষকে প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করছে। পার্লামেন্টে সকল দল একমত হয়ে আইন পাশ করছে। দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করছে। সারা দুনিয়া ক্রিকেটের স্কোর বোর্ডের মত করোনার স্কোর বোর্ড দেখছে। অতীতে কোনো বিশ্বযুদ্ধও মানুষকে এত ভাবিয়ে তুলতে পারে নি। অথচ মাত্র ৮২ দিনের ব্যাপার। দুনিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত সে বিস্তৃত হয়ে কোটি কোটি মানুষকে সে কাবু করে ফেলেছে। সে যে দেশেই ঢুকছে সে দেশকেই নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে।

আমাদের কপাল ভালো এই ৮২ দিনের মহামূল্যবান অভিজ্ঞতা আমরা অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে পেয়ে গেছি। এই অভিজ্ঞতা যদি আমরা কাজে না-লাগাই তাহলে  আমরা আমাদের কপালকে দুষতে পারবো না। দুষতে হবে আমাদের নির্বুদ্ধিতাকে, বালিতে আমাদের মাথা গুঁজে রাখাকে।

একটা দেশে ঢুকার পরপর সে কত শতাংশ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় সেটা জার্মানীর চ্যান্সেলরের ভাষণ থেকেই বুঝা যায় স্পষ্টভাবে। জার্মানীর মানুষ যখন করোনার চেহারার সাথে পরিচিত হতে পারে নি, এমন এক সময়ে চ্যান্সেলর মার্কেল জাতিকে জানালেন যে এই রোগ শিগগিরই  ৭০ শতাংশ জার্মান নাগরিকের মধ্যে সংক্রমিত হবে। কী সাহসী এবং স্পষ্ট বক্তব্য।  মার্চ ২০ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর  তার ভাষণে জনগনকে জানিয়ে দিলেন যে আগামী দু’মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২.৫ কোটিতে পৌঁছবে। অর্থাৎ তার রাজ্যের ৫৬% মানুষ ২ মাসের মধ্যে আক্রান্ত হবে। ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছিল জানুয়ারী ২২ তারিখে। মাত্র দু’মাস আগে। মাত্র চার মাসে একজন রোগী থেকে আড়াই কোটি রোগীতে গিয়ে পৌঁছবে। প্রচন্ড তার গতি। এই তার ধর্ম। তার গতিপথ পাল্টানোর কোনো ব্যবস্থা এখনো কেউ করতে পারেনি। আমাদের লড়াই হবে তার গতিপথ থেকে নিজেকে আড়াল করা। যারা যত সফলভাবে তা করতে পারবে তারা তত আঘাত কমাতে পারবে।

সবচাইতে সফলভাবে একাজটা করতে পেরেছে এশিয়ারই কয়েকটি দেশ। চীন একাজ পেরেছে, সেখানে এরোগের সূত্রপাত হয়েছিল ৮২ দিন আগে। এখন সেখানে এরোগকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর সফল হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, হংকং, এবং সিঙ্গাপুর। সফল দেশগুলির কৌশল ছিল একটাই। যে যখনই আক্রান্ত হচ্ছে তাকে চিহ্নিত করো। তাকে আলাদা যায়গায় রাখো। তাহলে সংক্রমণ থেকে অন্যরা রেহাই পাবে। সংক্রমণ থামাতে পারলেই রোগের বিস্তার হতে পারবে না। একজন থেকে ২ জনও যদি সংক্রমিত হয় তাহলে হু হু করে সংখ্যা বেড়ে যায়। একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছিঃ একজন যদি প্রতি ৫ দিনে ২.৫ জনকে আক্রান্ত করে তাহলে ৩০ দিনে সে একাই ৪০৬ জনকে আক্রান্ত করবে।

এশিয়ার এ সকল দেশগুলি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রান্তদের সনাক্ত করেছে এবং তাদেরকে অন্যদের থেকে দূরে রেখেছে। এর ফলে তাদের দেশের বেশি লোক আক্রান্ত হবার সুযোগ পায়নি। এখন এসব দেশে করোনার উৎপাত থেমে গেছে।

যারা একাজে গাফিলতি করে ভীষণ বিপদে পড়েছে তারা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং সুইজারল্যান্ড। এখন তাদের অবস্থা সামালের বাইরে।

আমরা কোন দলে?

এই মহুর্তে যদি জাতি সমস্ত সরকারী, বেসরকারী, সামাজিক, আন্তর্জাতিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে না-আসে, কোনো বিবেচনায় বিলম্ব করে, তাহলে এরোগের বিপুল প্লাবনকে বাঁধ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে পারবো না। জোয়ারের ঠেলায় সবকিছু ভেসে যাবে।

মহাপ্লাবন কি আসছে?

অবশ্যই আসছে। প্রায় দ্বারপ্রাস্তে। আমরা বরং দেরী করে ফেলছি। আর দেরী করার সুযোগ নেই।

জোয়ার ঠেকাতে হলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। যতজনকে পরীক্ষা করার সামর্থ্য আমাদের আছে ততজনকে পরীক্ষা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঠিক একথাই বারবার আমাদের বলে যাচ্ছে। পরীক্ষা। পরীক্ষা। পরীক্ষা। চিহ্নিত করো। আলাদা করো। চিহ্নিত করো। আলাদা করো।

এটা সোজা হিসাব। এই শিক্ষা আমরা “জুতা আবিষ্কারের” কাহিনী থেকে অনেক আগেই পেয়েছি। আমি যদি ধুলা থেকে নিজের পা-কে মুক্ত রাখতে চাই তাহলে সারা দেশ থেকে ধুলা পরিষ্কার করার কাজে লাগতে পারি, অথবা নিজের পায়ে জুতা পরতে পারি। আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সকলের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারি, অথবা আমরা সবাই তার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারি। প্রথমটাই সোজা কাজ, যখন আক্রান্ত ব্যক্তি মাত্র কয়েকজন, আর আক্রান্ত হতে পারে যারা তাদের সংখ্যা কয়েক কোটি। কয়েকজনকে পৃথক করে রাখতে পারলে কয়েক কোটি লোক বেঁচে যায়।

যদি আক্রান্তদের চিহ্নিত করার যন্ত্রপাতির অভাব থাকে তাহলে যেটুকু সামর্থ্য আছে তা-দিয়ে শুরু করতে পারি। তাদেরকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ জানবে প্রতিদিন কতজন আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ উৎসাহিত হবে এবং আক্রান্ত লোকের থেকে সাবধান হবে। যে ক’টা যন্ত্র আছে সে ক’টার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে হবে। মানুষকে তার ফলাফল জানতে দিতে হবে। আরো যন্ত্র কখন ক’টা আসছে সেই তথ্য জানাতে হবে। একজনকেও যদি চিহ্নিত করতে পারি এবং তাকে আলাদা রাখতে পারি তাহলে তার থেকে হাজার মানুষকে আমরা রক্ষা করতে পারলাম। পরীক্ষার গুরুত্ব কোনোভাবে কোনো সময় খাটো করা যাবে না। পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

এরোগ বিদেশ থেকে এসেছে। যখন এটা ঠেকানো খুবই সহজ ছিল সেটা আমরা করতে পারি নি। এখন এই দৈত্য বোতল থেকে বেরিয়ে গেছে। জাতির সবকিছু দিয়ে একে ঠেকাতে হবে।

আমরা জানি একে কিভাবে ঠেকাতে হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো কোনো গরজ আসছে না। আমরা জানি এটা কী, কিন্তু আমরা হৃদয়ঙ্গম করছি না। আমরা বলছি শারীরিক দূরত্বই এরোগ থেকে নিজে বাঁচা এবং অন্যকে বাঁচানোর একমাত্র পথ। সেকথা বলার জন্যই আমরা একটা সম্মেলন করার ব্যবস্থা করে ফেলতে পারি অতি উৎসাহে! অর্থাৎ কি বলছি আর কি করছি তার মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য নেই। এখনো বিষয়টা কথা বলাবলি, কাগজে লেখালেখি, টিভির টক শো’র আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছি। আমি আমার আচরণের কারণে কিছুদিনের মধ্যে, দু-তিন মাসের মধ্যে আমারই বাবা-মা, স্ত্রী, কিংবা দাদা-দাদী, কিংবা চাচা-চাচী, কিংবা বন্ধুবান্ধবের মৃত্যুর কারণ হতে যাচ্ছি এটা কিছুতেই মনে আসছে না।

দায়িত্ব পালনের খাতিরে অনেক উপদেশ দেয়া হচ্ছে কিন্তু সে উপদেশ যারা দিচ্ছেন তারা নিজেরা মানছেন কিনা, অন্যরা মানছেন কিনা এটা নিয়ে চিন্তিত হবার কারো গরজ কোথাও নজরে পড়ে না।

জাতির এই কঠিনতম সময়ে যেরকম নিদ্রাহীন, আহারহীনভাবে দিনরাত প্রস্তুতির কথা ছিল সেটা এখনো দেখা যাচ্ছে না। মহাপ্লাবন আসছে, বাঁধ রক্ষার যে শপথ চায় সে শপথের ডাক এখনো আসছে না।

কী কাজ করতে হবে সেটা আমরা জেনে গেছি। সকল মানুষের কাছ থেকে দূরত্ব রাখতে হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।

উপদেশ দেয়া এক জিনিস আর উপদেশ পালন করার জন্য দেশব্যাপী প্রচন্ড তাগিদ সৃষ্টি করা তা আরেক জিনিস। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। আমার নিজেকে বাঁচানোর, আমার পরিবারের সদস্যদের বাঁচানোর, আমার আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবদেরকে বাঁচানোর প্রতি কি আমরা এতই অনাগ্রহী? নাকি আমরা যা কিছু আমাদের চারপাশে ঘটছে সব কিছুকে “ফেইক নিউজ” ধরে নিয়ে স্বস্তি অনুভব করতে চাচ্ছি।

আশা করি দেশের তরুণরা দেশের এই মহাদুর্যোগের দিনে কারো দিকে না-তাকিয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসবে। তরুণরা নিজেদের সংগঠন তৈরী করে মানুষকে বাঁচানোর জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে। যেরকম তারা সব সময় সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এগিয়ে এসেছিল। এবার এটা কোনো স্থানীয় সুর্যোগ নয়। দেশব্যাপি এবং সকল মানুষের দুর্যোগ।

তরুণরা এই কথাগুলি মানুষকে বুঝিয়ে বলে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকার জন্য বলতে পারে। যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ীতে বাড়ীতে তরুণরা নিজেদের নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে সবাই যার যার পরিবারকে বাড়ীতে রাখা নিশ্চিত করবে। নিজ নিজ এলাকাকে মুক্ত এলাকা ঘোষণার চেষ্টায় থাকবে। যাদের জীবিকা বন্ধ হবে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য অন্য লোকের সহায়তা চাইতে পারে। বুঝাতে হবে যে গরীব যদি রোজগারের জন্য আবার পথে ঘাটে বের হয় তাহলে তারা অন্য সবাইকে আক্রান্ত করবে। তাদেরকে বাঁচার ব্যবস্থা করলে অন্যরা বাঁচতে পারবে।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সঠিক কাজ হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা আগামী কয়েক মাস শুধু মানুষকে বাঁচানোর জন্য নিজেদেরকে  নিয়োজিত রাখবে। তাদের একমাত্র কাজ হবে মানুষকে বাঁচানো। পরিস্থিতি ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। একমাত্র তরুণরাই  এই কঠিন সময়ে মানুষকে সঙ্গ দিতে পারে। সাহস দিতে পারে। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে পারে, সারা দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে।

তরুণরা শুরু করবে নিজ নিজ প্রস্তুতি নিয়ে, সংগঠন তৈরী করে, করণীয় কাজের তালিকা বানিয়ে, সম্ভাব্য সকল পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিকল্পনা নিয়ে।

শুরুতে তাদের কাজ হবে এলাকার সকল পরিবারকে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা নিয়ে। পরিবারের সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে দেয়া। এলাকার মানুষকে একজায়গায় একত্র হতে নিরুৎসাহিত করা, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এলাকার মানুষকে প্রস্তুত করা। দুর্যোগকালীন সকল নিয়ম কঠিনভাবে মেনে চলার জন্য নিজেদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাখতে হবে। তারা নিজেরা নিয়ম মানলে তখন এলাকার মানুষ তাদের নির্দেশিত নিয়মাবলীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

তরুণরা নিজেদের মধ্যে দেশব্যাপী যোগাযোগ রাখবে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রাখবে— একে অপরকে উৎসাহিত করার জন্য।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা সকল তথ্য ও নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। পরস্পরের মধ্যে পরামর্শ এবং উৎসাহ বিনিময় করবে।

এরকম কাজে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কিংবা পৃথকভাবে তরুণগোষ্ঠি, এনজিও-রা, সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহও এগিয়ে আসতে পারবে।

আমরা একটা জাতীয় দুর্যোগের মুখোমুখি। এই মহা দুর্যোগ আমাদের জাতীয় জীবনের সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যেতে পারে। করোনার আক্রমণ যদি অন্যান্য দেশের মত মহাদুর্যোগে পরিণত না-ও হয় তাহলেও আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি না নেয়ার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।

প্রস্তুতি নিতে হবে, এবং সেটা চরম দুর্যোগকে কল্পনা করে নিতে হবে। কোনো পর্যায়ে যেন আমাদেরকে অপ্রস্তুত হতে না হয়।

আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। যুদ্ধের সময় যেমন সারা দেশব্যাপী যুদ্ধ হয় তখন কোথাও কোথাও শত্রুকে পরাভূত করে "মুক্ত এলাকা" সৃষ্টি করা হয়। করোনার যুদ্ধেও আমরা এরকম "করোনামুক্ত" এলাকা তৈরী করতে পারি। সেটা একটা পাড়া হোক,একটা গ্রাম হোক, কিংবা আরো বড় এলাকা হোক। যাদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটা করা হবে এলাকাবাসী তো বটেই, জাতি তাদের চিরদিন স্মরণ রাখবে।

দেশের  প্রতিটি গ্রামে এনজিও-দের কর্মসূচি আছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণের কর্মসূচি আছে। ক্ষুদ্রঋণের ঋণগ্রহীতারা শৃংখলাবদ্ধতার সঙ্গে সকল দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্তই শুধু নয়, তারা একাজে বিশেষভাবে অভিজ্ঞ। তাদের শৃংখলাবদ্ধতা, এবং অভিজ্ঞতাকে আসন্ন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য কাজে লাগাবার প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদেরকে নতুন নীতিমালা তৈরী করে দিতে হবে। তারা কিভাবে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকবে, ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে কিভাবে নিজ পরিবারকে এবং গ্রামকে রক্ষা করবে এই নীতিমালায় তা পরিষ্কার করে দেয়া হবে। কারো বাড়ীতে করোনার আক্রমণ দেখা দিলে সে ব্যাপারে তাদের করণীয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে।

বলে দিতে হবে তারা তাদের স্বামী সন্তানদের কিভাবে বাড়ীতে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে, সামনের মহাপ্লাবন কত বড় হবে, কতদিন এই প্লাবনে আমাদের ভুগতে হবে, এর মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রধান অস্ত্রগুলি কি, প্রয়োজনে কার কাছে পরামর্শ ও সহায়তা পাওয়া যাবে, ইত্যাদি। তাঁদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে সাহস ও শৃঙ্খলা থাকলে যেকোন শত্রুর মোকাবেলা করা যায়। এই মহাপ্লাবনের মোকাবেলাও আমরা শক্তি, সাহস, এবং শৃঙ্খলা দিয়ে জয় করবো। মহাপ্লাবন যত শক্তিশালীই হোক-- এটা ক্ষণস্থায়ী। আমরা চিরস্থায়ী। আমাদেরকে তারা পরাজিত করতে পারবে না।

দেশের আরো বহু সরকারী, বেসরকারী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান আছে। গ্রামে গ্রামে তাদের অনেক কর্মী আছে। সকল প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের এই দুর্যোগরোধে নামিয়ে দিতে পারে।

মহাদুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে জান বাঁচালাম কিন্তু বাঁচতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হলাম। পথের ভিখারী হলাম। যা কিছু পুঁজি সব গেলো-- তার উপায় হবে কী?

দেশের সাধারণ মানুষ বাঁচবে কী করে। দেশের অর্থনীতি দুমরে মুচরে পড়বে। তার কী হবে ? যারা দিন এনে দিন খায় দুর্যোগ চলাকালে তাদের কী হবে?

সারা পৃথিবীর অর্থনীতি প্রায় ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। এর শেষ কোথা পর্যন্ত গড়াবে? মাঝখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি উঠে দাড়াবার কোনো শক্তি পাবে কিনা।

এখন থেকে এসব নিয়ে আমাদের চিন্তা শুরু করতে হবে। করোনা-পর্বের শেষে পৃথিবী পুনঃজন্ম হবে। বর্তমান এপৃথিবীর সঙ্গে তার বোধ হয় খুব বেশী একটা মীল থাকবে না। এই পুনঃজন্মের পৃথিবীতে বাংলাদেশের স্থান কোন স্থানে নির্ধারিত হবে।

করোনার দৈত্য বোতল থেকে বের হয়ে গেছে। এই দৈত্য কি পৃথিবী খাবে? তাকে যখন বোতলে হবে অথবা সে স্বেচ্ছায় বোতলে ফিরে যাবে তখন পৃথিবীর যাত্রা, বাংলাদেশের যাত্রা কোথা থেকে শুরু হবে।

মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।

কোনো ভাবেই সময় কিন্তু খুব বেশী আমাদের হাতে নেই।

সমাপ্ত

--
Category
SB Wiki SB Wiki

Resources

  • Startup Guide 2
  • Funds 4
  • FAQ 6
  • Nobin Udyokta (Young Entrepreneurs) 6
  • Social Business 6
  • Guidelines 2

Yunus Library

  • Speech 2
  • Interview 4
  • Documentary 6
  • Articles 6
  • About Prof. Muhammad Yunus 6


First Yunus Centre outside of Bangladesh, the Centre Yunus Paris is the permanent resource centre for Social Business in France.

Read More