সামাজিক ব্যবসা ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ডের নবীন পুঁজি বিনিয়োগ কর্মসূচি
16 Feb, 2021
সামাজিক ব্যবসা ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ডের নবীন পুঁজি বিনিয়োগ কর্মসূচি
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
তিনটি প্রতিষ্ঠান - গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট, গ্রামীণ ট্রাস্ট ও গ্রামীণ শক্তি সামাজিক ব্যবসা - তিনটি সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ-পুঁজি তহবিল (Social Business Venture Capital) গঠন করেছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই পৃথকভাবে এই তহবিলগুলোর মাধ্যমে নবীন পুঁজি বিনিয়োগ কর্মসূচি (Nobin Equity Programme) নামে একটি পুঁজি বিনিয়োগ কর্মসূচি বা সংক্ষেপে নবীন কর্মসূচি চালু করেছে। তিন প্রতিষ্ঠানই এই কর্মসূুচি একই পদ্ধতিতে পরিচালনা করছে।
এই নবীন কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে স্বল্প আয়ের তরুণ, শিক্ষিত বা নিরক্ষর, পুরুষ বা মহিলাদের ব্যবসায় মূলধন সরবরাহ করা এবং তাদেরকে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হতে সহায়তা করা। এই কর্মসূচি উচ্চ-ঝুঁকিবিশিষ্ট, সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ তরুণদের চালু ব্যবসা ও নতুন ব্যবসা উদ্যোগসমূহে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিনিয়োগ করে থাকে। যেহেতু এই কর্মসূচি একটি সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ, এটি নবীনদের ব্যবসায়ে বিনিয়োজিত অর্থ থেকে কোন লভ্যাংশ নেয়না। নবীন কর্মসূচির একটি “সহায়তা সেবা শাখা” রয়েছে যা তরুণ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ দেয় এবং ক্রমাগতভাবে ব্যবসার হিসাবরক্ষণ ও উন্নয়নে সহায়তা করে। এই সেবাটির জন্য উদ্যোক্তারা একটি সহায়তা ব্যয় বহন করে।
এই নবীন কর্মসূচির সফলতা পরিমাপ করা হয় তা আর্থিকভাবে টেকসই উপায়ে কত জন সফল উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পেরেছে তার উপর। একটি ব্যবসায় উদ্যোগকে তখনই সফল বলে বিবেচনা করা হয় যখন নবীন উদ্যোক্তা প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, অথবা মুনাফা-প্রত্যাশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে। নবীন উদ্যোক্তাদের যেন অর্থায়নের জন্য শুধু এর সামাজিক ব্যবসা বিনিয়োগকারীর উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে না-হয়। অন্যান্য বিকল্প উৎস থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য নবীন কর্মসূচির দুয়ার সবসময় খোলা থাকবে।
গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এই কর্মসূচিটি চালু করে। এর পর আরো দু’টি প্রতিষ্ঠান এই কর্মসূচিতে যোগদান করে। তারা হলো: গ্রামীণ ট্রাস্ট এবং গ্রামীণ শক্তি সামাজিক ব্যবসা। ২০২০ সালের শেষে এই তিনটি নবীন কর্মসূচি সম্মিলিতভাবে ৬১,০০০ নবীন উদ্যোক্তার উদ্যোগে ৬ শত ১১ কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছে এবং কর্মসূচির নিয়ম অনুসারে নিয়মিতভাবে পুঁজি প্রত্যাহারের মাধ্যমে ৩ শত ৯২ কোটি টাকার পুঁজি ফেরত নিয়েছে। অর্থাৎ এই মেয়াদকালে পুঁজি প্রতিষ্ঠানগুলি এই পরিমাণ মালিকানা তরুণ উদ্যোক্তাদের নিকট হস্তান্তর করেছে। সবচাইতে বড় খবর হলো, নবীন উদ্যোক্তারা নিয়ম মেনে নিয়মিতভাবে পুঁজি ফেরত দিয়ে গেছে। এই মেয়াদকালে অবলোপনকৃত পুঁজির পরিমাণ মাত্র দুই শতাংশ।
ঋণ বনাম পুঁজি
নবীন কর্মসূচি ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মধ্যে সাধারণ কিছু পরিচালনাগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরিচালনাগত এই সাদৃশ্যগুলির কারণে মাঝে মাঝে অনেকের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তাদের মনে হয় এই বিনিয়োগ আসলে ঋণ, পুঁজি নয়। পুঁজি বিনিয়োগের প্রচলিত নিয়ম-কানুনের সঙ্গে যেসব বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে তার কারণেই এই ভুল ধারণাটির জন্ম হয়। আমরা যখন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি শুরু করি তখনও মানুষ বলেছিল এটা আবার কোন ধরনের ঋণ। বিনা জামানতে আবার ঋণ হয় নাকি? ব্যাংক কেন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণ দেবে?
মানুষের সেসব ভুল ধারণা এখন কেটে গেছে। ক্ষুদ্রঋণ এখন একটি চমৎকার ঋণ কর্মসূচি হিসেবে পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ ঋণ হলেও তার সঙ্গে এটা আবার নিজস্ব অনেক নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে। যেমন - সাপ্তাহিক কিস্তির প্রচলন, সঞ্চয় বাধ্যতামূলক করার নিয়ম, কিছু সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে ঋণীদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা, ব্যাংকের নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করা - মানুষ ব্যাংকের কাছে যাবে না, ব্যাংক মানুষের কাছে যাবে ইত্যাদি।
ঋণ এবং পুঁজির মৌলিক পার্থক্যগুলি তুলে ধরলে বুঝা যাবে নবীন কর্মসূচির বিনিয়োগটা ঋণ, নাকি পুঁজি।
সনাতন ঋণ কর্মসূচির প্রধান বৈশিষ্টগুলি নিম্নরূপ:
ক) নির্ধারিত সময়ের জন্য কোনো জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান।
খ) ঋণের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে একটি পূর্ব-নির্ধারিত হারে ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক সুদ পরিশোধ।
গ) ঋণ গ্রহীতার বিভিন্ন দায় ও আইনী বাধ্যবাধকতার প্রতি ঋণ দাতার কোনোরূপ আইনগত দায়-দায়িত্ব না থাকা।
ঘ) ঋণ অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও ঋণ গ্রহীতা ঋণের সমুদয় টাকা সুদসহ পরিশোধ করতে বাধ্য।
পুঁজির বৈশিষ্টগুলো ভিন্ন। এগুলো হচ্ছে:
ক) পুঁজি বিনিয়োগ মানে ব্যবসার অংশীদার হওয়া। মালিকানা পাওয়া। ঋণে মালিকানা পাওয়া যায় না। পুঁজি বিনিয়োগকারীকে ব্যবসার ভাগীদার হিসেবে মুনাফার ভাগ দিতে হয়। মালিকানা যত শতাংশের, মুনাফার ভাগও তত শতাংশ।
খ) পুঁজি বিনিয়োগকারী কোন সুদ দাবী করতে পারে না। শুধু মুনাফার ভাগ পায়। মুনাফা না-হয়ে লোকসান হলে তখন কিছুই পায় না। ব্যবসায়ে লাভ হোক, লোকসান হোক, ঋণ প্রদানকারীকে চুক্তি অনুসারে সুদ দিয়েই যেতে হয়।
গ) পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসার মালিক হিসেবে ব্যবসার নীতি নির্ধারণে এবং ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করার অধিকার পায়।
ঘ) আইন পালনে অনিয়ম করলে মালিক হিসেবে পুঁজি বিনিয়োগকারীকে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হয়।
ঙ) ব্যবসায় বন্ধ হয়ে গেলে পুঁজি বিনিয়োগকারী তার পুরো পয়সা ফেরত পাবার কোন প্রশ্নই উঠে না। পাওনাদারদের সব পাওনা মিটিয়ে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তার ভাগের অংশ পায়।
নবীন কর্মসূচিতে পুঁজি বিনিয়োগের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি বহাল রেখে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির কিছু মিল আছে।
নবীন কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যসমূহ
নবীন কর্মসূচি পুঁজি বিনিয়োগের উপরিউক্ত সবগুলি শর্ত পুরোপুরি পূরণ করে। এর বাইরে নবীন কর্মসূচি তার কিছু বৈশিষ্ট্য এর সঙ্গে যোগ করে দিয়েছে যাতে নবীন উদ্যোক্তারা সহজে এই পুঁজি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। এইগুলি হচ্ছে:
ক) এটি একটি স্বল্পমেয়াদী পুঁজি বিনিয়োগ - প্রাথমিকভাবে এক বা দুই বছরের জন্য। ব্যবসা বড় হবার সাথে সাথে নবীন কর্মসূচি এতে আরো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে।
খ) পুঁজি বিনিয়োগকারী হিসেবে নবীন কর্মসূচি ব্যবসার মুনাফার অংশীদার। তবে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে নবীন কর্মসূচি ব্যবসা থেকে কোন মুনাফা গ্রহণ করে না। (সামাজিক ব্যবসার লক্ষ্য হচ্ছে কোনো সামাজিক/অর্থনৈতিক/পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা। এই ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত পুঁজির উপর বিনিয়োগকারী কোনো মুনাফা গ্রহণ করে না)। যেহেতু নবীন কর্মসূচি তার মুনাফা গ্রহণ করে না, তাই তার অদাবীকৃত মুনাফাকে ব্যবসার সংরক্ষিত আয় (জবঃধরহবফ বধৎহরহম) হিসেবে গণ্য করে হিসাবভ‚ক্ত করা হয়। এটা হিসাব বিজ্ঞানের একটা স্বীকৃত পন্থা। ফলে এটা ব্যবসার জন্য কোন দায় সৃষ্টি করে না। বরং এর ফলে ব্যবসার আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যবসার ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজনে উদ্যোক্তা এই সংরক্ষিত আয় থেকে ব্যয় করতে পারেন। এটা নবীন উদ্যোক্তার জন্য একটা বড় সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। যেহেতু নবীন কর্মসূচি কখনোই তার মুনাফার অংশ দাবী করে না, ফলে তার সংরক্ষিত আয়ের পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে। নবীন কর্মসূচির সঙ্গে তার চুক্তি শেষ হলে এটাকা তার নিজস্ব টাকায় পরিণত হয় Ñ যদিও টাকাটা ছিল সম্পূর্ণভাবে নবীন কর্মসূচির টাকা।
গ) নবীন কর্মসূচির সবচাইতে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিনিয়োগকৃত পুঁজির টাকা ফেরত নিতে থাকা। অর্থাৎ মালিকানা নবীন কর্মসূচি থেকে কমাতে থাকা, আর উদ্যোক্তার হাতে বাড়াতে থাকা। নবীন কর্মসূচির লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সম্পূর্ণ মালিকানা উদ্যোক্তার হাতে সোপর্দ করে দেয়া। নবীন কর্মসূচি মাসিক কিস্তিতে মালিকানা হস্তান্তরের একটি চুক্তি উদ্যোক্তার সঙ্গে করে নেয়। নবীন কর্মসূচি চুক্তির শুরুতে একটা থোক পরিমাণ টাকা উদ্যোক্তার হাতে তুলে দিয়ে তার ব্যবসার অংশীদার হয়। তার সঙ্গে চুক্তি হয় যে, প্রতি মাসে চুক্তি অনুসারে সে পুঁজি ফেরত দেবে এবং তার মালিকানা বাড়াতে থাকবে। চুক্তির শেষে সম্পূর্ণ মালিকানা উদ্যোক্তা ফেরত পাবে। এবং এছাড়াও ব্যবসার যত মুনাফা হবে তার মধ্যে নবীন কর্মসুুচির অংশ উদ্যোক্তার কাছে থেকে যাবে। এ-অর্থ নবীন কর্মসূচি কোনো দিন তার কাছে দাবী করবে না।
ঘ) এর সঙ্গে নবীন কর্মসূচি আরেকটি কাজ করে। নবীন উদ্যোক্তাকে পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে। পরবর্তী বিনিয়োগ একই ব্যবসাকে সম্প্রসারণের কাজে লাগাবার জন্য হতে পারে, পুরনো ব্যবসা বন্ধ করে অথবা খোলা রেখে অন্য আরেকটি ব্যবসার জন্য হতে পারে। প্রথম দফার বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ফেরত দিয়ে উদ্যোক্তা আবার একই নিয়মে দ্বিতীয় দফার বিনিয়োগ নিতে পারে। উদ্যোক্তাকে দ্বিতীয় দফার বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করাও নবীন কর্মসূচি তার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে।
দ্বিতীয় দফার বিনিয়োগ ফেরত দেয়া সমাপ্ত হলে উদ্যোক্তা তৃতীয় দফার বিনিয়োগ, তৃতীয় দফা শেষ করে চতুর্থ দফার বিনিয়োগ নিতে পারবে। নবীন কর্মসূচি তার কর্মসূচি উদ্যোক্তার জন্য বন্ধ-তো করবেই না, বরং নতুন নতুন দফায় বিনিয়োগ করাকে তার সাফল্য বলে বিবেচনা করবে।
দ্বিতীয় দফার পর তৃতীয় দফা। তৃতীয় দফার পর চতুর্থ দফা - এভাবে একটার পর একটা বিনিয়োগ চলার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। একেক দফায় পুঁজি বিনিয়োগ, আর মাসিক কিস্তিতে সে-পুঁজি ফেরত। এই প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকবে। উদ্দেশ্য একটাই। ক্ষুদে ব্যবসায়ীকে বড় ব্যবসায়ীকে পরিণত করা। এটাই নবীন কর্মসূচির লক্ষ্য। এভাবেই তার কর্মসূচিকে তৈরী করা হয়েছে। এর পেছনে আশাটা হলো এই পুঁজি বিনিয়োগ আর পুঁজি ফেরতের প্রতি দফায় পুঁজি বাড়বে, উদ্যোক্তার পুঁজি ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়বে, এবং তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
নবীন কর্মসূচির বিনিয়োগ এক বছর থেকে শুরু করে যেকোনো মেয়াদের হতে পারে। তবে সাধারনত দু’বছর মেয়াদের বিনিয়োগ দিয়েই শুরু করে উদ্যোক্তারা। পুঁজির মেয়াদ যাই হোক না কেন, এটি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে সমান মাসিক কিস্তিতে ফেরত দিয়ে উদ্যোক্তাকে সম্পূর্ণ মালিকানায় অধিষ্ঠিত করে দেয় ।
ঙ) প্রচলিত পুঁজি বিনিয়োগ ও নবীন কর্মসূচির পুঁজি বিনিয়োগের মধ্যে ব্যবহারিক দিক থেকে একটি বিরাট পার্থক্য আছে। প্রচলিত পুঁজি বিনিয়োগে যিনি বৃহত্তর শেয়ারের মালিক তিনিই ব্যবসার কর্তৃত্ব পান। নবীন কর্মসূচির ক্ষেত্রে ব্যবসার কর্তৃত্ব থাকে সবসময় উদ্যোক্তার হাতে। ব্যবসাতে তাঁর শেয়ার যাই হোক না কেন। এই ব্যবসা যৌথ-মালিকানার হলেও উদ্যোক্তাকেই “মালিক” হিসেবে গণ্য করা হয়।
চ) নবীন কর্মসূচির অধীনে একটি ব্যবসা সৃষ্টি হয় যৌথ-মালিকানাধীন কোম্পানী গঠনের আনুষ্ঠানিক আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটি চুক্তিপত্রের মধ্য দিয়ে। এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ব্যবসায়িক লাইসেন্স গ্রহণ করে।
ছ) উদ্যোক্তা যা কিছু তাঁর ব্যবসায় ব্যবহার করেন তার সব কিছুই, যেমন - তাঁর নিজের বা পরিবারের জায়গা, কামরা, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, তাঁর আগের ব্যবসার যাবতীয় মালপত্র ও মজুদকৃত সামগ্রী, সবকিছুই দাম ধরে তাঁর শেয়ারে রূপান্তরিত করে হিসাবভুক্ত করা হয়।
জ) দু’পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক উদ্যোক্তা ব্যবসার প্রধান নির্বাহী হিসেবে পরিগণিত হন। উভয় পক্ষই এই নিয়োগের শর্তগুলো মেনে নেয় যার মধ্যে নিয়োগের অবসানের শর্তগুলোও অন্তুর্ভূক্ত থাকে। উদ্যোক্তা ব্যবসার প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করার জন্য কী পারিশ্রমিক পাবেন তাও চুক্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
এটা একজন বেকার তরুণ বা তরুণীকে বেতন সমেত একটি ব্যবসার শীর্ষ ব্যবস্থাপনা “পদে” কাজ করতে উৎসাহিত করে, এবং সমাজে অন্যদের কাছে উদ্যোক্তাকে একটি মর্যাদার আসন দেয়।
নবীন কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ে সফল করে তোলা এবং একই সাথে নবীন কর্মসূচির বিনিয়োজিত অর্থ পরিকল্পনা মাফিক ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করা। উদ্যোক্তার ব্যবসা থেকে কোনরূপ মুনাফা নেবার কোনো অভিপ্রায় নবীন কর্মসূচির নেই।
নবীন কর্মসূচির সাফল্যের পোছনে থাকে বাধ্যতামূলক সহায়তা কর্মসূচি
নবীন কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ব্যবসাকে সফল করার পেছনে আছে একটি সুচিন্তিত ও শক্তিশালী সহায়তা কর্মসূচি। প্রতি মুহূর্তে এই কর্মসূচি উদ্যোক্তা এবং তার ব্যবসাকে সার্বিক সহায়তা দেবার জন্য প্রস্তুত থাকে। সহায়তা কর্মসূচিই নবীন কর্মসূচির হৃৎপিন্ড। এটা চালু থাকলেই নবীন কর্মসূচি চালু থাকে। এটা দুর্বল হলে নবীন কর্মসূচি দুর্বল হয়ে যায়। নবীন কর্মসূচির “সহায়তা শাখা” এই সার্বিক কর্মসূচিটি পরিচালনা করে।
উদ্যোক্তগণ এই সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে নবীন কর্মসূচিতে প্রবেশ করেন। এই সেবার জন্য উদ্যোক্তাকে প্রতি মাসে একটি নির্ধারিত খরচা প্রদান করতে হয় যার বার্ষিক পরিমাণ বিনিয়োগকৃত পুঁজির ১০% এর সমপরিমাণ অর্থ।
এই বাধ্যতামুলক সহায়তা সেবার প্রথম পর্যায়টি শুরু হয় সম্ভাব্য উদ্যোক্তার সাথে প্রথম যোগাযোগ থেকে, এবং তা শেষ হয় তহবিল ছাড়ের মধ্য দিয়ে। প্রথম পর্যায়ের এই সহায়তা কর্মসূচির মুখ্য কাজ হলো একজন অনভিজ্ঞ তরুণের মধ্য থেকে ব্যবসা ভীতি দুর করে তার মধ্যে ব্যবসা করার আগ্রহ এবং ব্যবসার মূল রীতিনীতিগুলি শিখিয়ে দেয়া। সাথে সাথে এমন একটা ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরী করা যেটাতে নবীন কর্মসুচি অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। এটা একটা কঠিন কাজ, তবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সহায়তা শাখা একাজে সফলতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
উদ্যোক্তার মাথায় আগে থেকেই কোন একটি প্রকল্পের ধারণা থাকতে পারে, অথবা এমনও হতে পারে যে তিনি ব্যবসা করার কথা কখনো চিন্তাই করেননি। নবীন কর্মসূচির কাজ হচ্ছে তাঁকে ব্যবসা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং এজন্য ধারাবাহিকভাবে ব্যবসার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে তাঁকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। এ পর্যায়ে উদ্যোক্তা ব্যবসার মৌলিক বিষয়গুলোর উপর প্রশিক্ষণ লাভ করেন যা তাঁকে একটি বাস্তবসম্মত প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করতে সহায়তা করে। নবীন কর্মসূচি এরপর উদ্যোক্তাকে হাতে ধরে পুরো প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নিয়ে যায় যার শেষে থাকে প্রকল্পের অর্থ ছাড়। এভাবে নবীন কর্মসূচি উদ্যোক্তার জন্য এটি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের “বিজনেস স্কুলের” মতো কাজ করে। তফাৎ হলো বিজনেস স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ব্যবসায় গিয়ে চাকরির সন্ধান করবে। আর নবীন কর্মসূচির সহায়তা কর্মসূচি থেকে বের হবে টাকা হাতে নিয়ে সত্যিকার ব্যবসার সুত্রপাত করার জন্য।
এই “বিজনেস স্কুলে” উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন যোগাযোগ প্রযুক্তি ও কৌশল নিয়ে কাজ করতে শেখানো হয়, যেমন কীভাবে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে প্রতিদিন ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হয়, কীভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়িক তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হয় ইত্যাদি। ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে দৈনিক ব্যবসায়িক তথ্য প্রেরণ করার বিষয়টা তাঁদের কাছে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। তাঁদের বেশীরভাগই আগে কখনো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেননি। যাঁরা করেছেন তাঁরাও স্মার্ট ফোনের ক্ষুদে বার্তার সুযোগ-সুবিধাগুলো কখনো কোন কাজে ব্যবহার করেননি।
বিনিয়োগের টাকা না-পাওয়া পর্যন্ত উদ্যোক্তাকে সহায়তা ব্যয়ের জন্য কোনো টাকা পরিশোধ করতে হয় না। এটাকা পরিশোধ হয় মাসিক কিস্তিতে, টাকা পাবার পর। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ দীর্ঘ হোক বা সংক্ষিপ্ত হোক, এতে সহায়তা ব্যয় বাবদ মোট দেয় টাকার কোন হেরফের হয় না। সহায়তা ব্যয় বাবদ উদ্যোক্তাকে মোট পরিশোধ করতে হয় নবীন কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাণের উপর। এটা মোট বিনিয়োগের ১০%। এটাকাও সমান কিস্তিতে মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য। তবে প্রশিক্ষণকালীন সময়ের জন্য কোন সহায়তা ব্যয় দিতে হয় না।
তহবিল পাবার পরই উদ্যোক্তা সহায়তা সেবার খরচা পরিশোধ করতে শুরু করেন। পরিশোধ শেষ হয় বিনিয়োগের পুরো অর্থ ফেরত দেবার পর। আগ্রহী যে-কোন তরুণ এই বিনামূল্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারে, তবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করলেই যে কেউ অর্থায়নের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন তা নয়। কেউ কেউ প্রশিক্ষণের শুরুতেই ঝরে পড়েন, কেউ আবার প্রশিক্ষণের শেষ প্রান্তে এসে অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। তাদের কাউকে কোনো টাকা দিতে হয় না।
সহায়তা সেবার অংশ হিসেবে উদ্যোক্তা ক্রমাগতভাবে হিসাবরক্ষণ সেবা, পরিবীক্ষণ সেবা, সমস্যা চিহ্ণিতকরণ ও সমাধান সেবা, বাজার ও ক্রেতা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই, নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ এবং অন্যান্য বিভিন্ন সেবা পেয়ে থাকেন।
নবীন কর্মসূচির সহায়তা সেবা শাখা আইনী পরামর্শ এবং সরকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মাবলী পালনের বিষয়গুলোতেও উদ্যোক্তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এটি উদ্যোক্তাকে নবীন কর্মসূচির সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত করে। এটি উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হয় তা শেখায় এবং পরবর্তী ধাপের তহবিলের জন্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরী করতে সাহায্য করে। এটি বাজারের সুযোগ ও সুবিধাগুলো খুঁজে বের করতে উদ্যোক্তাকে সহায়তা করে। সহায়তা সেবা শাখা উদ্যোক্তাকে এমনভাবে প্রস্তুত করে যাতে তিনি প্রতিটি ধাপের বিনিয়োগকে পরবর্তী ধাপগুলোর বিনিয়োগের একটি সিড়ি হিসেবে দেখতে পান যা তাঁকে তাঁর দক্ষতা অনুযায়ী ব্যবসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। সেবা শাখা এটি নিশ্চিত করে যে, তহবিল বা কলাকৌশলগত জ্ঞানের অভাব যেন উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ সফলতা অর্জনে কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
অনানুষ্ঠানিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাধারণত তাঁদের ব্যবসার তথ্যগুলো লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেন না। করলেও তা সুবিন্যস্তভাবে করেন না। তাঁরা স্মরণশক্তি ও অনুমানের উপরই মূলত নির্ভর করেন। সহায়তা সেবা শাখা এই চিত্রটি পুরোপুরি বদলে দেয়। প্রত্যেক নবীন উদ্যোক্তা একটি সার্বক্ষণিক ও সর্বাধুনিক আর্থিক প্রতিবেদন ও তথ্য সেবা এবং হিসাবরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সেবা পেয়ে থাকেন।
কাউকে প্রত্যাখ্যান করা হবে না
নবীন কর্মসূচির একটি মূলনীতি হচ্ছে এখানে কাউকে প্রত্যাখ্যান করা হবে না। কেউ ঝরে পড়লেও কর্মসূচি তার খোঁজখবর রাখবে এবং তাঁকে ফিরে আসতে ও আবারো চেষ্টা করতে ক্রমাগত উদ্বুদ্ধ করবে। তাঁরা যখন দেখতে পান যে, তাঁদের দলের অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন তখন তাঁদের কেউ কেউ আবারো চেষ্টা করতে উৎসাহিত হন। যাঁরা অর্থায়নের কোনো একটি দফায় অকৃতকার্য হন তাঁদের জন্যও একই নীতি প্রযোজ্য।
যখন উদ্যোক্তা তহবিল হাতে পান, তার পর থেকে দ্বিতীয় পর্বের সহায়তা সেবা শুরু হয়। উদ্যোক্তা এরপর যতদিন নবীন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকেন ততদিন দ্বিতীয় পর্বের এই সহায়তা বহাল থাকে। উদ্যোক্তাকেও এর জন্য মাসিক কিস্তি দিয়ে যেতে হয়।
উদ্যোক্তাকে নবীন কর্মসূচির একজন মাঠ প্রতিনিধির সাথে যুক্ত করে দেয়া হয় যিনি উদ্যোক্তার আশেপাশেই কোথাও থাকেন। এই মাঠ প্রতিনিধি উদ্যোক্তার জন্য একজন বন্ধু, দার্শনিক ও পথ-প্রদর্শকের ভ‚মিকা পালন করেন। তিনি তাঁর এলাকায় বাসকারী ১৫০ জন বা তার বেশী উদ্যোক্তার দায়িত্ব পালন করেন যাঁরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছেন। তাঁর দায়িত্ব হলো তাঁর আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী সকল উদ্যোক্তাকে তাঁদের ব্যবসায়ে সফল হতে সহায়তা করা। তাঁকে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয় যে, তাঁর উদ্যোক্তাদের সফলতা দিয়েই তাঁর নিজের সফলতা বিচার করা হবে। তিনি তাঁর উদ্যোক্তাদের জন্য যত বেশী দফায় নিরবচ্ছিন্ন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবেন নবীন কর্মসূচির চোখে তিনি তত বেশী সফল। আর এভাবেই তিনি বেকার তরুণদেরকে অভিজ্ঞ উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করার নবীন কর্মসূচির যে উদ্দেশ্য তা সফল করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
যদি কোনো দুর্বল উদ্যোক্তা কোনো এক দফার শেষে ঝরে পড়েন তাহলে প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে তাঁকে ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করা, তাঁর দক্ষতাকে শানিত করতে সহায়তা করা এবং পরবর্তী দফার জন্য তাঁকে প্রস্তুত করা। তাঁর ভ‚মিকা অনেকটাই একজন নিবেদিতপ্রাণ “স্কুল শিক্ষকের” মতো যিনি পরীক্ষার ফলাফলে যেসব ছাত্র দুর্বল প্রমাণিত হচ্ছে তাদের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেন; তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে তুলে সক্ষম করে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
যত বেশী সংখ্যক উদ্যোক্তা অবিচ্ছিন্নভাবে বিনিয়োগের পরবর্তী দফাগুলোয় অগ্রসর হবেন, যত বেশী সংখ্যক তরুণ চাকরির ইন্টারভিউর লাইনে অপেক্ষা না-করে বরং উদ্যোক্তা হবার দিকে আকৃষ্ট হবে - ততই নবীন কর্মসূচি সফলতা প্রমাণিত হবে। তাঁরা যত বেশী দফায় বিনিয়োগ গ্রহণ করবেন তাঁদের আত্মবিশ্বাসও তত বৃদ্ধি পাবে, এবং তাঁরা তাঁদের ব্যবসাকে আরো বেশী সম্প্রসারিত করতে আরো সফলভাবে পরিকল্পনা করতে পারবেন। প্রতিবারই যখন তাঁরা একটি দফার পুঁজি ফিরিয়ে দিয়ে আবার নিজের ব্যবসার পুরোপুরি মালিক হবেন, তাঁদের মন সাফল্যের গভীর আনন্দে ভরে যাবে। তাঁরা তাঁদের আত্মবিশ্বাসে আরো বলীয়ান হবেন।
নবীন সফটওয়্যার গ্রামীণ ইনফরমাল অর্থনীতির তাৎক্ষণিক ছবি তুলে ধরে রাখবে সবার কাছে
সহায়তা সেবা কর্মসূচির অধীনে উদ্যোক্তাকে প্রতিদিন তাঁর মোবাইল ফোন থেকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে দৈনিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রেরণ করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রত্যেক উদ্যোক্তার এই আর্থিক তথ্য নবীন কর্মসূচির স্থানীয় কার্যালয় ও প্রধান কার্যালয় কর্তৃক একটি ওয়েব-ভিত্তিক কেন্দ্রীয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। নবীন কর্মসূচির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে মজুদ জিনিষপত্রের বিবরণসহ সকল হিসাব-নিকাশ পরিচালিত হয়।
এর ফলে দৈনিক ভিত্তিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ও তার মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিপুল পরিমাণ তথ্য উৎপন্ন হয়। নবীন কর্মসূচির অধীনে অর্থায়নকৃত সকল ব্যবসা কর্তৃক সৃষ্ট এসব তথ্য সমগ্র দেশের অর্থনীতির সর্বনিম্নস্তরের গতিধারার একটি জীবন্ত চিত্র হিসেবে চলমান অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করা যাবে। কেউ যদি এই স্তরের অর্থনীতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চায় খুব সহজে এখান থেকে তা করা যাবে। নবীন কর্মসূচির বিস্তৃতি যতই বৃদ্ধি পাবে, এই তথ্যচিত্র তত বেশী অন্তর্দৃষ্টিমূলক হবে।
উদ্যোক্তার কাছে নবীন কর্মসচির আকর্ষণীয় দিকসমূহ
১) উদ্যোক্তার কাছে নবীন কর্মসূচির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, ব্যবসাতে টাকার প্রয়োজনে কোন স্থায়ী অংশীদারের সঙ্গে তাঁকে ভবিষ্যৎ রচনা করতে হবে না। নবীন কর্মসূচি এমন এক মজার অংশীদার যে, সে চুক্তি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদায় নেবার জন্য, তার মালিকানা ছাড়ার জন্য সে ব্যস্ত। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে সে তার অংশীদারিত্ব কমিয়ে নিতে চুক্তি করে। এটা উদ্যোক্তার জন্য অতি শুভ সংবাদ।
২) তার উপর সে তার মুনাফার টাকা উদ্যোক্তাকে দিয়ে যায়। তার উপর কোনো দাবী রাখে না। উদ্যোক্তার কাছে এটা ভারী আনন্দের মনে হয়।
৩) পুঁজি ফেরতের প্রক্রিয়ায় প্রতি মাসে উদ্যোক্তার মালিকানা বৃদ্ধি পায়, আর নবীন কর্মসূচির মালিকানা সে-পরিমাণে কমে যায়। এটা উদ্যোক্তার জন্য একটা উৎসাহের বিষয়। মাসে মাসে পুঁজি ফেরতের মধ্য দিয়ে এক সময় ব্যবসার শতভাগ মালিক হবার দিন গণনা একটি আনন্দের ব্যাপার, বিশেষ করে যেহেতু উদ্যোক্তার জানা থাকে ঠিক কখন তিনি তাঁর ব্যবসার পুরো মালিক হতে যাচ্ছেন।
৪) নবীন কর্মসূচির নিয়ম মোতাবেক উদ্যোক্তাকে তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে হয়। তিনি সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাঁর ব্যবসা সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নিতে পারেন।
৫) নবীন কর্মসূচির চাহিদা মোতাবেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারেও অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
৬) নিজে একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী হওয়া সত্তে¡ও দেশের বহুল পরিচিত ও শক্তিশালী একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাঁর ব্যবসার আনুষ্ঠানিক অংশীদার বলে উদ্যোক্তা নিরাপদ বোধ করেন।
৭) উদ্যোক্তা এই ভেবে আশ্বস্ত থাকেন যে, একদল উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার মানুষ প্রতিনিয়ত তাঁর ব্যবসা তত্ত্বাধান করছে। কোনোপ্রকার সমস্যায় পড়লে তাঁর এই অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় তিনি একাকী নন - কিছু দক্ষ লোক তাঁকে সহায়তা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছে।
৮) বিনিয়োগের একটি দফা শেষ হবার পর পরই আরেকটি বিনিয়োগের নিশ্চয়তা থাকায় ব্যবসার সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্যোক্তাকে দুশ্চিন্তা করতে হয়না। এর ফলে চলতি দফার বিনিয়োগ শুরুর সাথে সাথেই উদ্যোক্তা পরের দফায় ব্যবসার আকার কী হবে তা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করতে পারেন। ব্যবসার টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে তাঁকে আর ভাবতে হয়না।
উদ্যোক্তার মধ্যে এই বোধ তৈরী হয় যে, তাঁর ভবিষ্যত এখন তাঁর নিজেরই হাতে। এখন তাঁর যা করতে হবে তা হলো সততা, সৃষ্টিশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
আর এজন্য তিনি এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
অনুবাদক: কাজী নজরুল হক